অনেকেই চাচ্ছেন আমদানি ব্যবসা শুরু করে সেখান থেকে খুব ভালো মানের আয় করতে কিন্তু আমদানি ব্যবসা শুরু করা সহজ বিষয় নয়। আপনার এই ব্যবসা শুরু করতে একটু সময় দিতে হবে । এই সময়টা আসলে কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে , কতদিন লাগতে পারে এটা নিয়ে আজকের এই পোষ্ট আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো । চলুন শুরু করা যাক।
আজকে আমি কয়েকটা উদাহরণ আপনাদেরকে দিব যে আসলে কতদিন সময় লাগতে পারে। তাহলে আপনারা এখান থেকে বিস্তারিত বুঝতে পারবেন যে কিরকম সময় লাগতে পারে আমদানি ব্যবসা শুরু করতে। আমার একজন কাস্টমার সে হচ্ছে গাড়ির পার্টস আমদানি করতে চাইলেন চায়না থেকে। আমি তাকে বললাম যে চায়না থেকে গাড়ির পার্টস আমদানি করার জন্য আপনি প্রথমে সাপ্লায়ারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। পরে আমাদের মাধ্যমে সেম্পল নিয়ে আসতে হবে ।তখন তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে স্যাম্পল আমাদের ওয়ারহাউজে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য সাপ্লায়ার কে বলেন।
কিন্তু হচ্ছে স্যাম্পল আমাদের ওয়ারহাউজে পড়ে থাকার কারণে আসতে ৩-৪ মাস লেগে জায়। এই প্রোডাক্ট আসলে কোথায় গেল এই রকম খোঁজাখুঁজি করার পরে একসময় আমরা দেখতে পাই যে তার প্রোডাক্ট আছে কিন্তু সঠিক শিপিং মার্ক না দেওয়ার কারণে প্রডাক্ট আসেনি।
এরপরে প্রোডাক্ট আসার পরে আমাদের কাছ থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে গেলেন। এবারের পালা হলো সাপ্লায়ারের সাথে কথাবার্তা বলে আবার বেশি পরিমাণে অর্ডার করবেন । এয়াবার আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমি বললাম যে ঠিক আছে আমি একটা ইমপোর্ট লাইসেন্স এর ব্যবস্থা করে আমদানি করার ব্যবস্থা করে দিবো। আমাদের ইমপোর্ট লাইসেন্স এর মাধ্যমে আপনাকে প্রোডাক্টটা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দেব এবং আমরা ইম্পোর্ট লাইসেন্স গুলো ঠিকঠাক করি এবং তাকে বলি যে প্রোডাক্টটি অর্ডার করতে এবং চায়নাতে আমরা অ্যাডভান্স পেমেন্ট করে কিন্তু সমস্যাটা হলো যে মাল গুলো যখন উনি তৈরি করতে গেলেন তখন দেখা গেল যে চায়নাতে করোনার প্রভাব আবার শুরু হয় ।
বাংলাদেশে আবার আমাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেল কারণ আমরা ৮-৯ মাস ধরে তাদের জন্য অপেক্ষা করলাম ।এখন তারা বলতেছে যে আমাদের প্রোডাক্ট একটু সমস্যা রয়েছে তুমি একটা প্রোডাক্ট না নিয়ে আরেকটা নাও। আমার কাস্তমার বল্লো এটা সে নিতে পারবো না । এসব নিয়ে সমস্যার কারণে আবার দুই থেকে তিন মাস চলে গেল । প্রায় এক বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত আমরা প্রোডাক্ট বাংলাদেশে আনতে পারি নাই। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে আমরা প্রোডাক্ট আসি শিপিং করতে পারব।
শুরু করেছিলাম প্রায় এক বছর আগে কিন্তু এটা আনতে আনতে আমাদের প্রায় এক বছর লেগে গিয়েছে । প্রথম চালান গুলো আমরা ঠিকঠাকমতো পেয়ে গেলে বাকি গুলি সহজে পেয়ে যাবো আশা করি।
আপনাদেরকে আরেকটা ইমপোর্ট এর ব্যাপারে বলি । আমার কাস্টমার পাখির খাদ্য আমদানি করতে চায় । খাদ্যগুলো উনি চাচ্ছিলেন ইউক্রেন থেকে আমদানি করবেন। ইউক্রেনের কোন সাপ্লায়ারের সাথে কথা বলতে পারছিলেন না । যে সমস্ত সাপ্লায়ার রয়েছে ওদের অফিস হচ্ছে দুবাই । দুবাই কোম্পানি থেকে প্রোডাক্ট নিতে পারবে। তো সাপ্লায়ারকে উনি ইউক্রেনের কোম্পানির জন্য দুবাই কম্পানিতে টি টি ওপেন করেন। কিন্তু টাকাটা দুবাই থেকে সাপ্লাইয়ার পাচ্ছে না এবং না পাওয়ার কারণে প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস লেগে জায়। এই এল সি ওপেন করতে তিন থেকে চার মাস লেগে যায় । তারপর পণ্য আসতে আসতে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাসের মতো লেগে যায়।
প্রায় ১০ মাসের মতো উনার প্রসেসিং টা করতে করতে সময় লেগে যায়। উনার সমস্যা টা হচ্ছে উনি পরিবার থেকে টাকা নেয়। প্রোডাক্ট ইমপোর্ট করার ব্যাপারে উনার ফ্যামিলি খুব প্রেসার পড়তে থাকে । উনাকে বলা হয় যে তুমি যে টাকাটা দিয়েছে , টাকাটা কি আসলে আছে নাকি সাপ্লায়ার মেরে দিয়েছে।
আসল ব্যাপারটা হচ্ছে আপনার সময় দিতে হবে একটা বিজনেস দাঁড় করানোর জন্য। ইমপোর্ট বিজনেস এক্সপোর্ট বিজনেস বা যে কোন বিজনেস পরিপক্ক হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে । এত তাড়াহুড়া করে কোন ব্যবসা দাঁড় করানো সম্ভব নয়।
এখানে যে তিনটা ঘটনা তাদেরকে বললাম, দেখুন এই তিনটা কাজেই মাল খুব দেরি করে চলে আসে । এই কারণে ওনারা খুব প্রেসার এর মধ্যে পড়ে যায়। একজনের মাল এখনো আসে নাই ।
আসলে অনেক সময় অনেক পরিস্থিতির কারণে দেরি হয় । এটার জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে । পরবর্তীতে দেখা যাবে যে এরপরের কাজগুলো খুব সহজ হয়ে যাবে । কিন্তু আমরা ততদিন পর্যন্ত আসলে ধৈর্য ধারণ করা সম্ভব হয়না। আমরা আরো দ্রুত রেজাল্ট আশা করি।
দেখুন একটা ছোটখাটো চাকরির জন্য কিন্তু আমাদের বয়সের আমাদের ২০ থেকে ২৫ বছর সময় চলে যায় । মাস্টার্স করে তারপরে আমরা ছোটখাটো একটা চাকরির জন্য আবেদন করি। কিন্তু এখানে একটা ব্যবসার জন্য আমরা সময় দিতে রাজি হই না ।
